BUET Film Society

শুনতে কি পাও

BUET Film Society

শুনতে কি পাও? – সিনেমার একটি রিভিউ

দৃশ্যেরা আমাদের আটকায়ে রাখে কিংবা আমরা দৃশ্যের মধ্যে আটকায়ে থাকি। এই যেমন আমরা দেখি সুতারখালি গ্রামের রাখী, নরম শাড়ি আর তীক্ষ্ণ কোমর, সে যেমন বৃষ্টিতে ভিজতেসে। সৌমেন কে ডাকতেসে ঘর থেকে বাইরাও, ভিজবা আসো। কী আশ্চর্য! ঘূর্ণিঝড় আইলায় সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেসে কিছুদিন আগে এই অবস্থায় রাখীরে আমাদের লাগে – যারে বলে – প্রলয়ংকরী সুন্দর। ‘শুনতে কি পাও?’ দেখতে দেখতে আমরা নিজেদের আরো আবিষ্কার করি চায়ের দোকানে যেখানে আমরা দেখি সৌমেনরা ফুঁসে উঠে, রাষ্ট্রযন্ত্রের ইনজাস্টিস নিয়ে। সেই গল্পে চিৎকার চেঁচামেচিতে আমরাও থাকি। ‘হতদরিদ্র কাকে বলে? আইলা আমাদের সবাইরে সমান করে দিসে।’ রিজাইলিয়েন্স শব্দটারে ট্রান্সলেটেড ইনটু সিনেমা বললে যা হয় তার নাম ‘শুনতে কি পাও?’ এইখানে ডকুমেন্টেশন আর ফিকশন মাখামাখি হয়ে গেসে সৌমেন রাখি আর তাদের স্বপ্নময় সন্তানের গল্পে। আমরা দেখি কীভাবে গ্রামবাসী একত্র হয়ে বাঁধ বানায় – প্রকৃতিকে পোষ মানানোর আদিম প্রচেষ্টা আমাদের চোখের সামনে জ্বলজ্বল করতে থাকে। এই সে মানুষ – কী তীব্র তার জীবন, কী অফুরান তার শক্তি । আমরা রাখীকে মুগ্ধ হয়ে দেখি যখন সে নতুন মোবাইল কিনতে যায়। ২০৫০ টাকা দামের সিম্ফোনি মোবাইল। সন্তানের জন্য নিয়ে আসে আপেল আর কমলা। দেশ ধারণা আমাদের নতুন করে ভাবায় যখন রাখি ইন্ডিয়া চলে যেতে চায় আর সৌমেন বলে এখানে তাও কিছু করে খাইতেসি ওখানে গিয়ে কী করব। এই দুর্যোগ আর তাতে দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষের জীবন দেখাতে চান নাই কামার আহমেদ সাইমন আর সারা আফরীন, বলতে চেয়েছেন অন্য একটা গল্প। এ যেন ভিজুয়াল এথনোগ্রাফ। আমরা পেতে থাকি সুন্দরবনের গভীরে লুকানো এক বেঁচে থাকার ঘ্রাণ আর মধু দিয়ে ভাত। আর এত কিছুর মধ্যে সেই অঞ্চলের বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে পড়ে রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের অনেক কর্তব্য রয়েছে। গায় দেশের গান। মনে হয় এরচেয়ে করুণ সার্কাজম আগে কেউ কখনো করে নাই। আর যখন রেডিওতে বাজতে থাকে ক্লাইমেট কনফারেন্স এর খবর তখন মনে হয় দূর বহুদূরে বিউগল বাজে। এইসব দৃশ্য আর সুরে আটকে থাকি। পঁচিশটির বেশি আন্তর্জাতিক উৎসবে আমন্ত্রিত হয়েছে শুনতে কি পাও, জিতে নিয়েছে প্যারিসের সিনেমা দ্যু রিলে’র গ্রাঁপ্রি’ আর মুম্বাইয়ের ‘স্বর্ণশঙ্খ’। এসব মোটেও আশ্চর্যের নয় এই সিনেমা দেখলে পরে তা অনুভূত হয় খুব সহজে।

লিখেছেনঃ সাফির আবদুল্লাহ