BUET Film Society

Kantara

BUET Film Society

BFS Presents, “Movie Review”


Movie: KANTARA( 2022)- slight spoiler


এক রাজা সুখের খোঁজে একদিন সব ছেড়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়েন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক প্রতিমার সামনে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় তিনি ফীল করেন সেই পূর্ণতা- যার জন্য এতকিছু করা।
প্রতিমাটি ছিল স্থানীয় গ্রামবাসীদের- তাদের আঞ্চলিক দেবতা, “পাঞ্জুরলি”র (১)। রাজা চেষ্টা করেন প্রতিমাটিকে সাথে করে প্রাসাদে নিয়ে যেতে। কিন্তু গ্রামবাসী তা চায় না।
এরকম সময়ে গ্রামের মূল ধর্মগুরুর সারা শরীর কাঁপতে শুরু করে। একসময় তিনি অদ্ভুতভাবে চিৎকার করে বলে উঠেন-
“তুই আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে চাস?”
গ্রামের সবাই, ইনক্লুডিং রাজা বুঝতে পারেন যে এটা স্বয়ং পাঞ্জুরলিই- মানুষের শরীরে ভর করেছেন এই কথোপকথনের জন্য। গল্পের শুরুই হয় দেবতার সাথে মানুষের ডিরেক্ট বার্গেনিং দিয়ে- রাজা কি দিলে দেবতা তার সাথে প্রাসাদে যাবেন সে ব্যাপারে।
এটা ছিল কানতারা মুভির প্রথম দৃশ্য। এটা ছাড়াও এ মুভির আরো অনেকগুলো জায়গায় গডের সাথে মানুষের ডিরেক্ট কন্টাক্ট হয়। দৃশ্যগুলো এমনভাবে এক্সিকিউট করা যে সারা শরীর শিউরে উঠে। শুধু এই এক্সপেরিয়েন্সের জন্য হলেও মুভিটা দেখা উচিৎ। তবে সুন্দর ব্যাপার হচ্ছে কানতারায় শুধু এটা না- আরো অনেক কিছু আছে।
মুভির মেইন কনসেপ্ট আর ভিজুয়ালের সাথে আমি মিল পেয়েছি প্রিন্সেস মনোলকে, আমেরিকান গডস এবং লাভ ডেথ রোবটস এর জিবারো এপিসোডের। অন্যান্য বিষয়ে যাওয়ার আগে আমার কাছে মুভির মূল আকর্ষণ, “হিউম্যান-গড ইন্টার‍্যাকশন” এর ব্যাপারে আরেকটু কথা বলতে চাই।
আমি ছোট থেকে ইসলামিক পরিবেশে বড় হয়েছি। এই ধর্মের গড, আল্লাহর সাথে ডিরেক্ট কমিউনিকেশন হয় শুধু তার প্রেরিত পুরুষ আর ফেরেশতাদের। আল্লাহ সরাসরি সাধারন মানুষের সামনে আসেন না। সাধারন মানুষের কাছে তার মেসেজ আসে ইনডিরেক্টলি- নবী রাসূল আর ফেরেশতাদের থ্রুতে। এভাবে চিন্তা করার ফলে আমার ধারনা সাধারণ মানুষের সাথে গডের একটা দুরত্ব তৈরী হয়। একজন সাধারণ মুসলমান নরমালি কখনো এক্সপেক্টও করে না যে তার জীবদ্দশায় তার সাথে আল্লাহর কখনো ডিরেক্ট কন্টাক্ট হবে। গড ইজ টু বিগ ফর দ্যাট- আমি অধম কখনোই তার অস্তিত্ব ডিরেক্ট ফীল করতে পারবো না।
পরবর্তীতে আমার মনে হয়েছে এটা হওয়াটা আসলে অনেক কঠিনও। ধরুন একটা ঘোড়া আর মানুষ- দুইজই কার্বন বেজড লাইফ ফর্ম, ম্যামালও! কিন্তু তবুও- ডিরেক্ট কমিউনিকেশন সম্ভব না। ওইটাও বাদ দিলাম- মানুষেরই এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় কথা ট্রান্সলেট করলে প্রথম ভাষার ভাইব বা ফীলটা হারিয়ে যায়। আর সেখানে ঈশ্বর একদম অন্য ডিমেনশনের একজন। কিভাবে পারবো আমি তার সাথে গল্প করতে?
ইসলামের দেয়া গডের সংজ্ঞায় তিনি চাইলেই সবকিছু পারেন। সেক্ষেত্রে এই কথাগুলো আসলে অর্থহীন। তবুও আমাদের নিজেদের বোধ, জ্ঞান থেকে এক্সপ্লোর করলেও মনে হয় ঈশ্বরের সাথে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ ডিরেক্ট না হয়ে মধ্যবর্তী সত্ত্বার থ্রুতে হওয়াটা বেশ লজিক্যাল।
যা হোক, কান্তারাতে গড সাধারন মানুষের সাথে সরাসরি কথা বললেও তার নিজের আসল ফর্মে করেন না। কথা বলেন মিডিয়ামের থ্রুতে। সেই সময়টায় মিডিয়ামের শরীর কাঁপতে থাকে, ঠিকমত কথা বলতে পারেন না,একটু পরপর চিৎকার করে উঠেন। একজন আব্রাহামিক ধার্মিকের মনে হতেই পারে- “গড কেন এমন হবে?”
ব্যাপারটাকে দুইভাবে নেয়া যায়-
এক. বেশীরভাগ আইডিওলজিতে গড অতি প্রাচীন একটা সত্ত্বা। তো তার মধ্যে আদিম, বুনো একটা ভাইব থাকাটা কিন্তু র‍্যাশনাল। আর গড নরমাল কেউ না। তার বিহ্যাভ একসেন্ট্রিক হবে- আমার কল্পনায় এরকমই ভাসে।
দুই. গডের অস্তিত্ব আরো হাইয়ার ডিমেনশনে। তিনি হাই এনার্জির সত্ত্বা। তার এই এনার্জি যখন তিনি লোয়ার ডিমেনশনের লো এনার্জি ক্যাপাসিটির সত্ত্বায় চ্যানেল ডাউন করবেন, তখন এক্সেস এনার্জি ভেন্ট আউট করার জন্য শরীর কাঁপা, থেকে থেকে কন্ট্রোল হারিয়ে চিৎকার করা বা নাচানাচি করা- এটাও ফিজিক্সের হিসেবে লজিকাল। অন্তত আমি এভাবেই নিয়েছি।
এই মুভির একটা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হল যে এটা আসলে একটা রিয়েল কমিউনিটির গল্প। মুভিতে যেই বাৎসরিক অনুষ্ঠানটা দেখানো হল- এর নাম ভুতা-কলা(১)। তারা এখনও বিশ্বাস করে যে ওই সময় গড তাদের সামনে আসে। পরে ঘেঁটে দেখলাম কেরালায় এরকম অনেক কমিউনিটি আছে যাদের পিরিয়ডিক অনুষ্ঠান থাকে যেখান গড মানুষের মাধ্যমে তাদের কমিউনিটিতে আসে, মানুষের সাথে কথা বলে, খবর নেয়। ইউটিউবে কিছু ভিডিও আছে (৪)- লাইন ধরে মানুষজন ঈশ্বরের সাথে কথা বলছে, হাত ধরে নাড়ছে – এই জিনিসগুলোকে আমি সবসময় উন্নাসিকভাবে দেখে এসেছি। কিন্তু কখনো যারা বিলিভার – তাদের সাইড থেকে চিন্তা করিনি। কি তীব্র একটা ফীলিংস হওয়ার কথা এটা- যে আমাকে বানিয়েছে, যার হাতে আমার সবকিছু- তার সাথে আমি কথা বলছি, তাকে স্পর্শ করছি- ভাবলেই আমার গা শিউরে উঠে!
এ পর্যায়ে একটু ডিট্যুর নিতে চাই। ঈশ্বর বা গড একটা কমন টার্ম হলেও প্রত্যেক টাইপের ধর্মে , আইডিওলজিতে এর সংজ্ঞা কিন্তু আলাদা। ইসলামে যে ঈশ্বরের কথা বলা আছে, তার যেই গুণাবলি, ক্যারেক্টারস্টিক্স, সেগুলো কিন্তু শিন্তো ধর্মের কোন গডের সাথে মিলে না। হিন্দু ধর্মের দেবতা রাগ করে, ভুল করে। এখানে মানুষের সাথে গডের তুলনা করা চলে- “দূর্গার মত মা”, “শিবের মত স্বামী” – এগুলো খুব কমন ফ্রেজ। ইসলামে গডের সাথে কারো তুলনা করা বিগ নো। কারন এখানে মানুষ আর গড অনেক দূরের সত্ত্বা। আবার জিউসের কথা ধরি- সে-ও গড। কিন্তু সে তার নিজের সৃষ্টি করা মানব নারীর সাথে যৌনতায় লিপ্ত হয়। তাও আবার ধোঁকা দিয়ে। আব্রাহামিক গড একেবারেই এরকম না। এই যে বিভিন্ন মতবাদের ঈশ্বর যে আসলে আলাদা এর কিছু মজার ও ঝামেলাপুর্ণ ফলাফল আছে। যেমন আমি নিজেও অনেকদিন ভাবতাম মুসলিমরা এত সেন্সেটিভ কেন তাদের ধর্মের ব্যাপারে? মুভিতে জেসাস ফাকিং ক্রাইস্ট বলা যায়, মন্দিরের ঘণ্টা গুলতি দিয়ে বাজানো যায়, কিন্তু ইসলামের কোন কিছু নিয়ে কিছু বলা যায় না- এর কারন আগে আমি ভাবতাম মুসলিমদের নেইভিটি। এখন মনে হয় যে এই ধর্মে ঈশ্বর ও তার চোজেন ফিউয়ের আইডিয়াটাই এমন যে অনুসারীরা এ ব্যাপারে খুবই স্ট্রিক্ট। ধর্ম বা ঈশ্বরের আইডিয়াকে, ধর্মানুভূতিকে আসলে জেনারেলাইজড করা সম্ভব না।
ফিরে আসি- কানতারা বেশ পলিটিকাল একটা মুভিও। একটা জমি- এর মালিক আসলে কে? অধিবাসীরা নাকি ল্যান্ডলর্ড নাকি সরকার? গল্পের শুরুতে কোন আধুনিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ছিল না। পরে তা তৈরি হয়। তৈরি হতে হতে এই রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে সাধারণ মানুষের যেই কনফ্লিক্ট মুভিতে দেখানো হয়েছে- এরকম কিন্তু আসলেই হয়েছে ইতিহাসে অজস্রবার। এমনকি ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএস বানানোর সময়ও হয়েছে। সরকার, আর্মি উচ্ছেদ করেছে একটা গোটা গ্রামকে- এই ২০১০ এর দিকেই। রিয়েল লাইফের মত কানতারাতেও এই জনগোষ্ঠী ছিল বোকাসোকা, “কুসংস্কারাচ্ছন্ন”। তারা বুঝে না আইনের মারপ্যাঁচ, বুঝে না কোন সময়ে কোন ডিলটায় রাজী হতে হয়। বুঝে না যে পুলিশকে জানিয়ে মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করতে দিলে সেটা তাদের মোটিফকেই চরিতার্থ করবে। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীদের এই সোশাল ইস্যুগুলো মুভিতে ডিপিক্ট করা হয়েছে হলিস্টিকভাবে।
এবার আসি কালচারাল সাইডে। কানতারার নায়কের নাম “শিভা”। খুব স্পষ্টতই সে হিন্দু গড শিবের প্রতীক। সে পুরো গ্রামের রক্ষক হয়ে যুদ্ধ করে পুলিশের সাথে, ল্যান্ডলর্ডের সাথে। আবার সে ধ্বংসক হয়ে গাছ কাটে, বন্য প্রাণী শিকার করে, গাঁজায় দম দেয়– খুবই ইনডেপথে পোট্রে করা একটা ক্যারেক্টার শিভা। সে এক মেয়ের (নায়িকা) ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার পেটে চিমটি দেয় – মেয়েটা কিছুই করে না। একদম লোলুপ দৃষ্টিতে সে তাকে “চিপায়” নিয়ে যায়। মেয়ে না-না করলেও সে জোর করে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে, দর্শনে পিছিয়ে থাকা কিছুটা আদিম একটা সমাজের আলফা মেলের কি এরকমই হওয়ার কথা না? চোখে কটু লাগলেও কানতারায় টক্সিক মাসকিউলিনিটির এই প্রকাশ আমার কাছে রিয়েল লেগেছে ( জানি না এগুলো মাস পিপলের জন্য মশলা হিশেবে ছিল নাকি বাস্তবতা মিমিক্রির জন্য। ধরে নিয়েছি পরেরটা)। এখানে আরেকটা জিনিস বলতেই হয়- এ মুভিতে আর্টিস্টদের মেকআপ, লোকেশন, সেট, মুভিতে দেখানো ইভেন্টগুলো, মানুষের কথাবার্তার ধরন, আচরণ – সবকিছু এত ন্যাচারাল! হ্যাটস অফ!
মুভির আরেকটা ছোট, ইগ্নোরেবল টপিক সামহাউ আমাকে নাড়া দিয়েছে। এখানে ওই নেটিভ ট্রাইবের লোকজন কিন্তু পরিবেশের প্রতি খুব একটা সদয় না। তারা নির্বিচারে গাছ কাটে, পশু মারে- যা নিয়ে লোকাল অথোরিটির সাথেও তাদের গ্যাঞ্জাম বাঁধে।
আমরা নরমালি ধরে নেই যে ট্রাইবাল কমিউনিটি পরিবেশের জন্য ভাল। কিন্তু সবসময় তা হয় না। এর একটা ইন্টারেস্টিং উদাহরন হল Sama-Bajau (২)। মালয়শিয়া- ফিলিপিন্সের ওই দিকটাতে মেইনলি পানিতে বাস করা যাযাবর এই নৃগোষ্ঠী অনেক সময় মাছ ধরে বোমা মেরে (৩)। এই নিয়ে তাদের সাথে সরকারের, পরিবেশবাদী সংস্থার হামেশাই কনফ্লিক্ট হয়। খুব রেয়ার এই বিষয়টি মুভিতে তুলে আনা হয়েছে হাল্কা টাচে।
সব শেষে স্তুতি করবো শিভার অভিনয়ের। ক্যারেক্টারটা প্লে করেছেন ডিরেক্টর নিজেই। ফাক মি হার্ড- এতো জোস অভিনয় একটা মানুষ কিভাবে করে? পুরাটা টাইম সে ক্যারেক্টারের মধ্যে। এবং যখন যেমনটা দরকার তখন ঠিক তেমনটা করে গেছে সে। ইন্ডিয়ায় সাধারণত নায়কদের নেগেটিভ দিক গুলোও মুভিতে শ্যুগার কোটিং করে দেখানো হয়, পাড় মাতাল হলেও চেহারা খুব ফ্রেশ দেখায়, লুইচ্চামি করার সময়ও হিরো হিরো লুক দেয়- ইত্যাদি। কানতারা এমন না। নায়কের দাঁত-মুখ বিশ্রীভাবে লাল হয়ে থাকে, সে গাঁজায় টান দিয়ে যখন উপরে তাকায়- ওহ! চুড়চুড়ে চানাচুরের মত মাতাল চোখ- রিয়েল লাইফে যেমনটা হয়। নায়িকার দিকে সে যখন লোভাতুর চোখে তাকায়- পুরাই মাদারচোদের মত লাগে দেখতে। এই ছোটখাটো জিনিসগুলো আমার খুবই ভাল লেগেছে। আর সব বাদ দিলেও শেষ ১০ মিনিট যা করলো এই লোক— এই ব্যাপারে আমি কিছুই বলবো না। দেখে নিয়েন।
শেষকথা:
আমার ওয়াইফ মুসলিম। আমরা কানতারা একসাথে দেখেছি। গডের সাথে মানুষের ডিরেক্ট কথা হওয়ার সময়টায় আমার যেমন গা শিউরে উঠেছিল, তার তেমন হয়নি। খুব সম্ভবত এর কারন তার কাছে গডের এক্সিস্টিং একটা স্ট্রিক্ট সংজ্ঞা আছে- যেটার সাথে এটা মিলে না। আমার যেহেতু নেই, হয়ত কনসেপ্টটা অ্যাবসর্ব করতে পেরেছি টু সাম এক্সটেন্ট। একেশ্বরবাদীদের জন্য এই মুভি হতে পারে পলিথিস্টিক বা প্যাগান মেন্টালিটি, ফিলোসফি বুঝার একটা ছোট্টো ওয়ে। খোলা মন নিয়ে মুভিটি দেখুন- ইটস হেল অফ অ্যান এক্সপেরিয়েন্স!


১: ভুতা কলা, পাঞ্জুরলি, ও অন্যান্য রিলেটেড গড: https://en.wikipedia.org/wiki/Buta_Kola
২: Sama Bajau নৃগোষ্ঠী: https://en.wikipedia.org/wiki/Sama-Bajau
৩: Sama Bajau দের “ফিশ বোম্বিং”: https://theaquaticape.org/tag/fish-bombing/
৪: গডের সাথে মানুষের গল্প গুজব ও কুশলাদি বিনিময়: https://youtu.be/BeczZlAnnQM (৩:৪৫ মিনিট থেকে)


Reviewed by: Shadman Sakib -NAME