BUET Film Society

রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি

BUET Film Society

সিরিজ রিভিউ
সিরিজঃ রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি(REKKA)
প্লাটফর্মঃ হইচই
মূলগল্পঃ মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন
পার্সোনাল রেটিংঃ৬/১০


কোন এক ইন্টারভিউতে আমি শুনেছিলাম সৃজিৎ অর্থনীতি ছাত্র হিসেবে একটা ফর্মুলা পেয়ে গেছে যে কোন মুভিটা কিভাবে করে বানালে তার শিল্পসত্তা যেমন বজায় থাকবে তেমনই ব্যবসাসফল হবে। তাই তার ঝুলিতে যেমন জাতীয় পুরস্কার আছে, সেই সাথে তার ছবিগুলো ব্যবসাসফলও। কিন্তু সেই সাথে এইটাও দুর্ভাগ্যজনক যে তার এই ফর্মুলা এখনকার দিনে আর কাজ দিচ্ছে না তাই তার কাজগুলো আশানুরূপ ও হয় না। এই কথাগুলো বলেছিলেন যিশু সেনগুপ্ত। সংস্কৃতির এই বিশ্বায়ন ও গণতন্ত্রায়নের যুগে একটা নির্দিষ্ট ফরমুলার ছবি যে খুব বেশিদিন টিকবেও না সেটা স্বাভাবিক। তবে পরিচালক এর নিজের যত্নের অভাবে যখন কোন প্রজেক্ট খারাপ হয় তাহলে সেটাকে আর কোন কিছুকে দোষ দেওয়ার মানে নেই। এই সিরিজটি একটা উদাহরণ হতে পারে।
মূল রিভিউতে চলে আসা যাক।
স্লো বার্ণ ট্রিটমেন্ট এ গল্প বলার একটা বড় সুবিধা হলো একজন ধৈর্ষশীল দর্শককে পুরো গল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পরিচালককে একটু সতর্কই হতে হয় যাতে ডায়লগ ডেলিভারি,ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, আর পরিবেশটা মিলে দর্শক একদম মজে উঠেন। কিন্তু ধরুন এমন হলো যে একটা mysterious ব্যাপার চলতেছে হুট করে একটা রবীন্দ্রসংগীত বেজে উঠলো। কেমন লাগবে তখন? এই সিরিজটি এই দোষে দুষ্ট। মাঝে মাঝে দুম করে রবীন্দ্রসঙ্গীত বেজে উঠছিলো এই সিরিজটিকে। আমার কাছে এটি অপ্রয়োজনীয় লেগেছে। ঋতুপর্ণ ঘোষ এইদিকে যথেষ্ঠ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তারই একটা ইউটিউব লিংক নিচে দিয়ে দিব। এছাড়া ক্যারেক্টর ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রেও পরিচালক খুব একটা যত্ন দেননি৷ উদাহরণস্বরূপ, এই গল্পের অঞ্জন দত্তের অভিনয় করা খাশনোবিশ চরিত্রটি। গল্পে তার গুরুত্ব অনেকটাই এই কারণে যে প্রোটাগনিস্ট যখন কোন ভাবেই কেইস সলভ করতে পারছে না তখন এই খাশনোবিশ এর দ্বারস্থ হন। পুরো সিরিজ মিলিয়ে তার স্ক্রিনটাইম সবমিলায়ে ২০-৩০ মিনিট হবে। গল্পে তার এন্ট্রি, কেইস সমন্ধে জেনে একটা সমাধান দেয়া এসব বিষয়গুলো পরিচালক এড়িয়ে গেছেন। সেই সাথে ছোট চরিত্রগুলোকেও আরো বেশি এনগেজিং করা যেত বলেই আমি মনে করি। সিরিজের ভালো দিক হলো মুসকান জুবেরী চরিত্রে বাধন। রহস্যময়ী,লাস্যময়ী ক্যারেকটার যেমন হওয়া উচিত বাধন সেখানো কোন অংশে কম ছিলেন না। সেই সাথে তার ডায়ালগ ডেলিভারি ছিল বেশ ভালো। বাংলায় রহস্যময়ী নারী চরিত্র হিসেবে তাকে অনেক দর্শক। নিরুপম চন্দ চরিত্রে রাহুল বোস এর একটাই অপরাধ তার বাংলা উচ্চারণ। এমনকি আঁতর আলিও। আঁতর আলি বাংলাদেশী, বাংলাদেশ- ভারত বর্ডারের কাছাকাছি তার বাড়ী। সেদিক থেকে তার উচ্চারণ আমাদের মতই হওয়া উচিত। সেটা করতে গিয়ে তার অভিনয় একটু অতিরিক্ত হয়ে গেছে। একটি গল্প শুধু একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে না, সেখানে থাকে একটা নিজস্ব সংস্কৃতি, কথা বলার ধরণ। চিবিয়ে চিবিয়ে বাংলা বলা বা দাদাদের বাংলা বলা আমাদের দেশের কোন গল্পকে রিপ্রেজেন্ট কখনোই করে না।
এত খারাপের মাঝে ভালো অবশ্যই আছে। এইটা অবশ্য টেকনিক্যাল সাইড। ব্যক্তিগতভাবে আমার এই সিরিজটির আর্ট ডিরেকশন, সেট ডিজাইন খুবই মানানসই লেগেছে। মুসকান জুবেরীর কিচেন রুমই বলেন বা বাড়ির সিঁড়ির দিকের ডেকোরেশন বলেন একদম পার্ফেক্ট। সিনেমাটোগ্রাফি ইনডোর লোকেশন এ ভালো হয়েছে অনেক। সিঁড়ি ধরে মুসকান জুবেরী উপরে উঠে যাওয়ার সময়কার jib shot টা চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মত।
একজন পরিচালকের প্রথম ছবি যেখানে ‘বাইশে শ্রাবণ’
। সালভাদর দালির চিত্রকর্ম দেখে যিনি বানিয়েছেন ‘ নির্বাক’ এর মত ছবি। তার কাছ থেকে দর্শক আশা করে আরেকটি বাইশে শ্রাবণ। REKKA র মত প্রজেক্ট না। সৃষ্টিকর্তা উনাকে সুবুদ্ধি দিক।
ঋতুপর্ণ ঘোষের মুভিতে রবীন্দ্রসংগীতঃhttps://youtu.be/u96MJrjO3BM

  • Ajoy Kumar Sarker (ME ’18)